লাইব্রেরি কার্যক্রম শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়

শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয় লাইব্রেরি কার্যক্রম

শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানার্জন নয়, বরং শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি, সৃজনশীলতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তার ঘটানো। এ উদ্দেশ্য পূরণে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেওরাইট ওহাবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সেকশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এটি কেবল বই পড়ার জায়গা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জন্য জ্ঞানের ভাণ্ডার, সৃজনশীলতার কেন্দ্র এবং মানসিক বিকাশের এক অনন্য ক্ষেত্র

লাইব্রেরির ইতিহাস ও গুরুত্ব

১৯৭১ সালে শহীদ গিয়াস বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই একটি সাধারণ পাঠাগার চালু করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পাঠ্যচাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ লাইব্রেরিতে রূপ দেওয়া হয়। বর্তমানে এটি বিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেকশন হিসেবে পরিচিত।

লাইব্রেরির গুরুত্ব বহুমাত্রিক—

  • শিক্ষার্থীদের জ্ঞানভাণ্ডার বিস্তার করে।

  • পাঠাভ্যাস তৈরি করে।

  • মননশীলতা ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করে।

  • পরীক্ষায় সাফল্যের পাশাপাশি বাস্তব জীবনের জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে।

  • অবসর সময়কে সৃজনশীলভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ দেয়।

লাইব্রেরির সংগ্রহ

শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সেকশনে সমৃদ্ধ বইয়ের ভাণ্ডার রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের চাহিদা ও আগ্রহ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের বই সংগ্রহ করতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—

  • পাঠ্যপুস্তক : মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শ্রেণির বই।

  • রেফারেন্স বই : অভিধান, এনসাইক্লোপিডিয়া, এটলাস, বিশ্বকোষ ইত্যাদি।

  • সাহিত্যকর্ম : বাংলা ও ইংরেজি গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস।

  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি : পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার প্রযুক্তি বিষয়ক বই।

  • ইতিহাস ও ভূগোল : দেশি-বিদেশি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক গ্রন্থ।

  • ধর্মীয় বই : কোরআন শরিফ, হাদিস, ইসলামী সাহিত্য, নৈতিক শিক্ষা বিষয়ক বই।

  • সাময়িকী ও পত্রিকা : দৈনিক সংবাদপত্র, মাসিক ও সাপ্তাহিক সাময়িকী।

এ সংগ্রহ শিক্ষার্থীদের পাঠ্যচাহিদা পূরণের পাশাপাশি জ্ঞানকে বহুমাত্রিক করে তোলে।

পাঠাগারের পরিবেশ

লাইব্রেরি সেকশনটি শান্ত, সুন্দর ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশে সাজানো হয়েছে। এখানে আরামদায়ক টেবিল-চেয়ার, বুকশেলফ এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত নিরিবিলি পরিবেশে বসে বই পড়তে পারে।

পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে লাইব্রেরিতে উপস্থিত দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা বই ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও কার্যক্রম

লাইব্রেরি সেকশনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ক্রমবর্ধমান। প্রতিদিনই অনেক শিক্ষার্থী এখানে এসে বই পড়ে বা ধার নেয়। তাদের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে।

বিশেষ কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে—

  • বইপড়া প্রতিযোগিতা : শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করে।

  • দেয়ালিকা প্রকাশ : শিক্ষার্থীদের সাহিত্য প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করে।

  • পাঠচক্র আয়োজন : দলগতভাবে বই পড়া ও আলোচনা করার মাধ্যমে বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়ানো হয়।

  • বিশেষ দিবস পালন : বিশ্ব বই দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ইত্যাদি উপলক্ষে আলোচনা সভা।

আধুনিকায়নের উদ্যোগ

বর্তমান যুগে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সে লক্ষ্যে পেওরাইট ওহাবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সেকশনকে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

  • ডিজিটাল লাইব্রেরি চালু করার উদ্যোগ।

  • কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সুবিধা সংযোজন।

  • অনলাইন রিসোর্স ও ই-বুক ব্যবহারের সুযোগ।

  • লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার দ্বারা বই সংরক্ষণ ও হালনাগাদ করা।

এসব উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের জ্ঞানভাণ্ডারে প্রবেশাধিকার দেবে।

শিক্ষার্থীদের উপকারিতা

লাইব্রেরি সেকশন শিক্ষার্থীদের বহুমাত্রিক উপকারে আসে—

  • নিয়মিত বই পড়ার মাধ্যমে পরীক্ষার প্রস্তুতি আরও ভালো হয়।

  • পাঠাভ্যাস তাদের চিন্তাশক্তি প্রসারিত করে।

  • গল্প, কবিতা ও সাহিত্য পড়া শিক্ষার্থীদের আবেগ, নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলি বিকাশ করে।

  • রেফারেন্স বই ব্যবহার করে তারা জটিল বিষয় সহজে আয়ত্ত করতে পারে।

  • প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আধুনিক তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

পরিশেষে,

সর্বোপরি বলা যায়, শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সেকশন শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের পাঠাভ্যাস, নৈতিকতা ও সৃজনশীলতা বিকাশে এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করছে। একটি লাইব্রেরি কেবল বইয়ের স্তূপ নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত শিক্ষাকেন্দ্র, যেখানে জ্ঞানের আলো শিক্ষার্থীদের মনকে আলোকিত করে।

শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সেকশন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনে যেমন সহায়ক, তেমনি একটি জ্ঞাননির্ভর সমাজ গড়তেও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

Scroll to Top