শিক্ষণ কার্যক্রম শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়
শিক্ষা মানব জীবনের ভিত্তি এবং জাতির উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও চিন্তাশক্তি বিকাশে বিদ্যালয়ের শিক্ষণ কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মানসম্মত শিক্ষা, নৈতিকতা ও মানবিকতার আদর্শে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষণ কার্যক্রম সুসংগঠিত, আধুনিক ও শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়।
🎓 পাঠ্যক্রম ও পাঠদান পদ্ধতি
বিদ্যালয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। প্রতিটি শ্রেণির জন্য নির্দিষ্ট পাঠ্যসূচি অনুযায়ী ক্লাস পরিচালিত হয়। শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষকে শিক্ষার্থীদের শেখার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন কার্যকর কৌশল প্রয়োগ করেন।
শুধু লেকচার নয়, বরং প্রশ্নোত্তর, আলোচনা, গ্রুপ ওয়ার্ক, প্রজেক্ট ও প্রেজেন্টেশনভিত্তিক শিক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের চিন্তা, বিশ্লেষণ ও প্রকাশক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

🧑🏫 শিক্ষকবৃন্দের ভূমিকা
শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ অভিজ্ঞ, দক্ষ ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিক। তাঁরা কেবল পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নন, বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, দেশপ্রেম ও সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদানেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
প্রতিটি শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন। তাঁরা ক্লাসে বিভিন্ন উদাহরণ, চিত্র ও বাস্তব জীবনের ঘটনাকে ব্যবহার করে পাঠকে জীবন্ত করে তোলেন, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে বুঝতে পারে।
🧠 শিক্ষণ পদ্ধতির বৈচিত্র্য
শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষণ কার্যক্রমে বৈচিত্র্য একটি বড় শক্তি। বিদ্যালয়ে অডিও-ভিজ্যুয়াল ক্লাস, স্মার্ট বোর্ড, চার্ট, ম্যাপ, স্লাইড ও প্রজেক্টর ব্যবহার করে পাঠদান করা হয়।
বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষাগারে বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা দেওয়া হয়। গণিত, ইংরেজি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ব্যবহারিক অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়।
এছাড়া শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্ব অনুযায়ী পাঠদান করেন—যাতে দুর্বল শিক্ষার্থীও আগ্রহ নিয়ে শেখার সুযোগ পায়।
📚 ক্লাস রুটিন ও সময়সূচি
বিদ্যালয়ে প্রতিদিনের ক্লাস রুটিন সুসংগঠিতভাবে সাজানো হয়। সকালকালীন ও দিবাকালীন দুটি শিফটে (প্রয়োজনে) পাঠদান পরিচালিত হয়।
প্রতিটি ক্লাসের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত থাকে এবং বিরতির সময় শিক্ষার্থীদের মানসিক বিশ্রাম ও আনন্দের সুযোগ দেওয়া হয়।
🔬 ব্যবহারিক ও ল্যাবভিত্তিক শিক্ষা
শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য একটি সুসজ্জিত বিজ্ঞানাগার রয়েছে। এখানে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের পরীক্ষাগুলো হাতে-কলমে শেখানো হয়।
এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) বিষয়ে রয়েছে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিং, টাইপিং, গ্রাফিক্স ও ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করে।
এই ব্যবহারিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে দক্ষ করে তোলে।
🪶 মূল্যায়ন ও পরীক্ষা ব্যবস্থা
বিদ্যালয়ে নিয়মিত মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। মাসিক পরীক্ষা, ত্রৈমাসিক ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত অগ্রগতি নিরীক্ষণের জন্য শিক্ষকরা ধারাবাহিকভাবে ক্লাস টেস্ট, হোমওয়ার্ক ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করেন।
এছাড়া শিক্ষার্থীর উপস্থিতি, আচরণ ও অংশগ্রহণও মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধা তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয়।
📖 বিশেষ সহায়তা ও রিমেডিয়াল ক্লাস
দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ে রিমেডিয়াল ক্লাস বা অতিরিক্ত পাঠদান ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষকরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আলাদা সহায়তা প্রদান করেন, যাতে কেউ পিছিয়ে না পড়ে।
এছাড়া পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট, প্রশ্ন অনুশীলন ও পরামর্শমূলক ক্লাসের আয়োজন করা হয়।
🧩 সহপাঠ শিক্ষণ কার্যক্রম
শিক্ষণ কার্যক্রমের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে সহপাঠ কার্যক্রমও শিক্ষার পরিপূরক ভূমিকা পালন করে। স্কাউট, বিতর্ক, সাহিত্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দলগত কাজ, নেতৃত্ব ও দায়িত্ববোধের শিক্ষা গ্রহণ করে।
শিক্ষকরা এসব কার্যক্রমে নির্দেশক ও পরামর্শক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন, যা শিক্ষার্থীদের শেখার মান আরও সমৃদ্ধ করে।
💡 শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার
আধুনিক যুগে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা কল্পনাও করা যায় না। শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয় ডিজিটাল শিক্ষণ ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয়েছে।
শিক্ষকদের অনেকেই স্মার্ট ক্লাস পরিচালনা করেন, যেখানে প্রজেক্টর, মাল্টিমিডিয়া ও অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করা হয়।
এতে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়, ডিজিটাল পাঠ্যপুস্তক ও ই-লার্নিংয়ের সুবিধা লাভ করে।
🧍♂️ নৈতিক ও চারিত্রিক শিক্ষা
বিদ্যালয়ের শিক্ষণ কার্যক্রমের একটি বিশেষ দিক হলো নৈতিক শিক্ষা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলা, সততা, দায়িত্ববোধ, দেশপ্রেম ও মানবিক গুণাবলির চর্চা বিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্যগুলোর একটি।
প্রতিদিন সকালে সমাবেশে জাতীয় সংগীত, ধর্মীয় প্রার্থনা ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ক বক্তব্য প্রদান করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের মননশীল করে তোলে।
🕊️ পরিশেষে,
শহীদ গিয়াস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষণ কার্যক্রম কেবল বইপুস্তকভিত্তিক শিক্ষা নয়, বরং একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া যা শিক্ষার্থীর জ্ঞান, মনন, নৈতিকতা ও দক্ষতা বিকাশে সহায়ক।
এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও নিবেদনেই শিক্ষণ কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা, ব্যবহারিক অনুশীলন, সহপাঠ কার্যক্রম ও নৈতিক চর্চার মাধ্যমে বিদ্যালয়টি গাজীপুর জেলার অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।